বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন

শর্তের বেড়াজালে এক অঙ্কের সুদ

শর্তের বেড়াজালে এক অঙ্কের সুদ

স্বদেশ ডেস্ক:

শর্তের বেড়াজালে পড়ে গেছে ব্যাংক ঋণের এক অঙ্কের সুদ। প্রায় দেড় বছর আগে আমানতের ৬ ও ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর বিপরীতে প্রায় ডজন খানেক সুবিধা আদায় করে নিয়েছিলেন ব্যাংক উদ্যোক্তা ও ব্যাংকাররা। কিন্তু এ ৬/৯ আজো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ঋণের সুদ এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনতে ৬ শতাংশ আমানতের আবার নিশ্চয়তা চেয়েছেন ব্যাংকাররা। একই সাথে এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্থাৎ প্রজ্ঞাপন চেয়েছেন তারা।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকাররা এ নিশ্চয়তা চেয়েছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) নতুন চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখারসহ প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে সিঙ্গেল ডিজিটের বাইরে রাখার সুপারিশ করেছিলেন এমডিরা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সেই সুপারিশ সমর্থন করে না। কারণ দেশের উন্নয়নে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদানও কোনোভাবে ছোট করার সুযোগ নেই। তাই এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। অর্থাৎ জামানতবিহীন ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ছাড়া আর সব ঋণেই এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর হবে বলে তিনি জানান।

কবে নাগাদ এ ছয়-নয় কার্যকর করা হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম জানান, ১ এপ্রিল থেকেই এ সুদহার কার্যকর হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্কটের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সেখান থেকে ব্যাংকগুলোর আমানত একসাথে উঠিয়ে না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ভুয়া ঋণ বন্ধে জামানত সংরক্ষণের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে জামানত সংরক্ষণে শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এমডিদের।

বাজার অর্থনীতিতে ঋণ বা আমানতের সুদহার চাপিয়ে দিতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদহার চাহিদা ও জোগানোর ভিত্তিতেই আপন গতিতে চলে। এ কারণে ঘোষণার গত দেড় বছরেও এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করা যায়নি। আবার নতুন এ করে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদৌ ৬/৯ সুদহার কার্যকর হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে এবিবি চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, আমাদের আগে ৬ শতাংশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। অর্থাৎ ৬ শতাংশ আমানত পেতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্থাৎ প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। আর তা হলে ৬/৯ বাস্তবায়নে তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, গভর্নর জানিয়েছেন, যথাসময়ে সার্কুলার জারি করে বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটা আমরা করতে বাধ্য। তিনি মনে করেন, ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একই সাথে সরকারি আমানত যত তাড়াতাড়ি দেয়া হবে তত তাড়াড়াতাড়ি এটি কার্যকর করা সম্ভব হবে।

আলী রেজা ইফতেখার বলেন, সভায় আমাদের বিশেষ কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকিং খাতের কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছি। ঋণ অবলোপনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে কোনো কিছু পরিবর্তন করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক বিবেচনা করবে। গত দেড় বছরে ৯/৬ সুদহার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি কেন প্রশ্নের জবাবে আলী রেজা ইফতেখার জানান, শব্দটি ৯/৬ নয়, ৬/৯ হবে। আগে ৬ শতাংশে আমানত পরে ৯ শতাংশে ঋণ দেয়া হবে। এর মাধ্যমে গত দেড় বছরে আমাদের ব্যর্থতা প্রমাণ হয়নি বরং বাজারের চাহিদাই ছিল এমন। ২ শতাংশে ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কাজটি পুরোপুরি ব্যাংক ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আগাচ্ছে। ২ শতাংশে ঋণ পুনঃতফসিল করবে কি না সেটা পুরোপুরি ব্যাংকের ব্যাপার। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।

এসএমইতে এক অঙ্কের সুদ বাদ দিতে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কী মতামত জানিয়েছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণেই সুদ এক অঙ্কের পক্ষে। তবে তারা জানিয়েছেন, এসএমইর শুধু উৎপাদনশীল খাতের অংশে তারা এক অঙ্কের সুদহার কার্যকর করতে অনুরোধ করেছেন। অনুৎপাদনশীল খাত যেমন- ভোক্তা ঋণসহ অন্য খাতে বাদ দিতে বলেছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877